মানুষ জন্মগতভাবেই নিরাপত্তা ও শান্তির প্রয়োজন অনুভব করে। কিন্তু পৃথিবীতে শয়তান, জ্বিন, অশুভ শক্তি এবং নানা প্রকার ক্ষতির আশঙ্কা থেকে আমরা কখনোই সম্পূর্ণ নিরাপদ নই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য এমন কিছু দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, যা তাদের প্রতিদিনের জীবনে ঢাল ও সুরক্ষার মতো কাজ করে। তেমন একটি শক্তিশালী দোয়া হলো — “আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক”।
এই দোয়াটি শুধু একটি বাক্য নয়; বরং এটি এমন এক ইবাদত যা একজন মুমিনকে আল্লাহর অসীম হেফাজতে ঢেকে রাখে। আজকের আলোচনায় আমরা এই দোয়ার অর্থ, হাদিসে এর প্রমাণ, ফজিলত ও বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
দোয়াটি আরবি হরফে
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ (Bangla Transliteration)
আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খলাক
অর্থ (বাংলা অনুবাদ)
“আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাগুলোর সাহায্য চাই, আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তার অমঙ্গল থেকে।”
শব্দ-by-শব্দ বিশ্লেষণ
-
أعوذ (আউজু) – আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি।
-
بِكَلِمَاتِ اللَّهِ (বিকালিমাতিল্লাহি) – আল্লাহর কালিমাগুলোর মাধ্যমে।
-
التَّامَّاتِ (তাম্মাতি) – যা পরিপূর্ণ, নিখুঁত এবং অটল।
-
مِنْ شَرِّ (মিন শাররি) – অমঙ্গল বা ক্ষতি থেকে।
-
مَا خَلَقَ (মা খলাক) – যা কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন।
এখানে বোঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর কালিমাগুলো এতই শক্তিশালী ও পূর্ণাঙ্গ যে, তাঁর সৃষ্টির কোনো অমঙ্গলই তা ভেদ করতে পারে না।
হাদিসে এই দোয়ার প্রমাণ
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এই দোয়া তিনবার পড়ে, আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল হওয়া পর্যন্ত তাকে কোনো কষ্ট আঘাত করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার পড়ে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে কোনো কষ্ট আঘাত করতে পারবে না।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: 2708)
অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবী ﷺ সাহাবিদের সন্তানদের উপর এ দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন, যাতে তারা অশুভ প্রভাব ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকে।
দোয়ার ফজিলত
-
শয়তান থেকে রক্ষা – আল্লাহর এই দোয়া পড়লে শয়তান ও তার কুমন্ত্রণা দূরে থাকে।
-
জ্বিন ও অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষা – জ্বিন, হিংসুক দৃষ্টি (হাসাদ) এবং অদৃশ্য ক্ষতির ভয় দূর হয়।
-
মানসিক শান্তি – পড়লে মনের মধ্যে প্রশান্তি আসে, ভয়-আশঙ্কা কমে যায়।
-
ভ্রমণে নিরাপত্তা – রাস্তা, জঙ্গল, নির্জন স্থান বা হোটেলে অবস্থানকালে পড়া উপকারী।
-
সন্তানদের হিফাজত – ছোটদের উপর পড়ে ফুঁ দিলে তারা অশুভ প্রভাব থেকে বেঁচে যায়।
-
রাত্রীকালীন সুরক্ষা – রাতে ঘুমানোর আগে পড়লে অদৃশ্য ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
কখন এই দোয়া পড়া উচিত?
-
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়, বিশেষ করে ফজরের পর এবং মাগরিব/ইশার পর।
-
নতুন কোনো স্থানে প্রবেশের সময়।
-
ভয় বা আতঙ্ক অনুভব করলে।
-
সন্তানদের উপর সুরক্ষা হিসেবে।
-
ভ্রমণে বের হওয়ার সময় বা যাত্রার মাঝে।
বাস্তব জীবনে দোয়ার প্রয়োগ
একজন মুসলিমের জন্য দোয়াটি কেবল মুখস্থ থাকাই যথেষ্ট নয়, বরং নিয়মিত জীবনে আমল করাও জরুরি। যেমন:
-
প্রতিদিন সকালের রুটিনে এ দোয়াটি অন্তর্ভুক্ত করা।
-
সন্তান ঘুমানোর আগে পড়া।
-
অচেনা জায়গা বা হোটেলে উঠলে এ দোয়া পড়া।
-
মানসিক চাপ বা ভয়ের সময় পড়ে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে দোয়ার তাৎপর্য
এ দোয়া আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, প্রকৃত সুরক্ষা কোনো পাহারাদার বা অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে নেই; বরং আল্লাহর কালিমার মধ্যে রয়েছে। আল্লাহর কালিমাগুলো চিরন্তন, অটল ও শক্তিশালী। তাই বান্দা যদি আন্তরিকভাবে এ দোয়া পড়ে, তবে আল্লাহর হেফাজত অবশ্যই লাভ করবে।