গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ কি বিস্তারিত জানুন

- আপডেট সময় : ১০:৩৮:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
অনেক সময় আমরা অনুভব করি, পেটে অস্বস্তি, ঘুমের মধ্যে দাঁত ঘষা, অথবা মলত্যাগে কৃমির মতো কিছু বের হওয়া। এই সমস্যা বেশিরভাগ সময় গুড়া কৃমি হওয়ার কারণে হয়। বাচ্চাদের মধ্যে এই কৃমি বেশি দেখা গেলেও বড়দেরও এটি হতে পারে।আজ আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো, গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ কি, এর লক্ষণ, প্রতিকার এবং প্রতিরোধ।
গুড়া কৃমি কি বিস্তারিত
গুড়া কৃমি (Pinworm বা Threadworm) এক ধরনের পরজীবী কৃমি যা মানুষের অন্ত্রে বাস করে। এটি সাদা ও সূতার মতো দেখতে হয় এবং সাধারণত রাতে মলদ্বারের চারপাশে ডিম পাড়ে। এই ডিম থেকেই নতুন কৃমির জন্ম হয়, এবং সংক্রমণ ছড়ায়।
গুড়া কৃমির লক্ষণসমূহ
গুড়া কৃমির কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- ঘুমের সময় মলদ্বারে চুলকানি
- ঘন ঘন পেট ব্যথা
- ক্ষুধা কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া
- ঘুমের মধ্যে দাঁত ঘষা
- ক্লান্তিভাব ও মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মলত্যাগের সময় কৃমি দেখা যাওয়া
উদাহরণস্বরূপ, ৫ বছরের একটা বাচ্চা হঠাৎ রাতের বেলা ঘুমাতে না চাওয়া বা মলদ্বারে ঘন ঘন চুলকানি করলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন, এটা গুড়া কৃমির উপসর্গ হতে পারে।
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ কি?
এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই জাগে, গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ কি? চলুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নেই:
- অপরিষ্কার খাদ্য গ্রহণ
অনেক সময় অর্ধেক রান্না করা খাবার বা বাইরের খোলা খাবার খেলে কৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করে। - সংক্রমিত পানি পান করা
বিশুদ্ধ নয় এমন পানি থেকেও গুড়া কৃমি হতে পারে। - ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব
নখ না কাটা, হাত না ধোয়া – এসব অভ্যাস গুড়া কৃমি সংক্রমণের কারণ হতে পারে। - খালি পায়ে মাটি বা নোংরা জায়গায় হাঁটা
বিশেষ করে গ্রামের দিকে শিশুরা অনেক সময় খালি পায়ে খেলে, যা কৃমি সংক্রমণের বড় কারণ। - অন্যদের ব্যবহৃত জিনিস শেয়ার করা
যেমন তোয়ালে, চাদর, বালিশ—যদি সংক্রমিত ব্যক্তির হয় তবে আপনি সহজেই আক্রান্ত হতে পারেন।
শিশুদের কৃমির কারণ ও ঝুঁকি
শিশুদের মধ্যে কৃমির সমস্যা অনেক বেশি দেখা যায়। তারা বেশিরভাগ সময় মাটি, খাবার, খেলনা সবকিছু মুখে দিয়ে ফেলে।এছাড়া বাচ্চারা হাত না ধুয়ে খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে, যা সংক্রমণ ছড়াতে সাহায্য করে।
কৃমি প্রতিরোধের উপায়
সচেতনতা এবং কিছু সাধারণ অভ্যাস কৃমি প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর:
- প্রতিদিন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (বিশেষ করে খাবার আগে ও পরে)
- নখ ছোট করে কাটা
- খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়া
- শিশুদের খেলার পরে পরিষ্কার করা
- পরিষ্কার পানি ও সঠিকভাবে রান্না করা খাবার খাওয়া
- নিজের বিছানা, চাদর, বালিশ কভার নিয়মিত পরিষ্কার করা
কৃমি দূর করার উপায়
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কৃমির ওষুধ খাওয়া সবচেয়ে ভালো উপায়। বাংলাদেশে সাধারণত মেবেনডাজোল বা অ্যালবেনডাজোল ব্যবহার করা হয়। যেমন: Vermox, Zentel ইত্যাদি। তবে এক ডোজ খাওয়ানোর পর ২ সপ্তাহ পরে আবার একটি ডোজ খাওয়ানো দরকার, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে।
কৃমির ঘরোয়া চিকিৎসা
অনেকে প্রাকৃতিক উপায়েও কৃমি দূর করার চেষ্টা করেন:
- কাঁচা রসুন খেলে কৃমি দুর্বল হয়।
- কাঁচা পেঁপে ও তিল তেল কৃমি প্রতিরোধে কার্যকর।
- সকালে খালি পেটে কালোজিরা মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
তবে ঘরোয়া প্রতিকারগুলো দীর্ঘমেয়াদে কাজ করে, তাই তৎক্ষণাৎ সমাধানের জন্য ওষুধই সেরা।
প্রচলিত ভুল ধারণা
অনেকে ভাবেন, কৃমি মানেই শুধু শিশুরাই আক্রান্ত হয়, এটা ভুল। বয়স্করাও সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারেন। আবার, অনেকে মনে করেন শুধু মিষ্টি খেলে কৃমি হয়, এটাও সত্যি নয়। মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবই গুড়া কৃমির প্রধান কারণ।
আমার শেষ কথা
গুড়া কৃমি হওয়ার কারণ কি? এ প্রশ্নের উত্তর জানলে আপনি নিজেই অনেক কিছু প্রতিরোধ করতে পারবেন। সচেতনতা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, এবং নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ কৃমি থেকে মুক্তির একমাত্র পথ। স্বাস্থ্যই সম্পদ। তাই নিজের ও পরিবারের যত্ন নিন।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও উত্তর
গুড়া কৃমির লক্ষণ কীভাবে বোঝা যায়?
ঘুমের সময় চুলকানি, দাঁত ঘষা, পেট ব্যথা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে সন্দেহ করা যায়।
কৃমি কীভাবে শরীরে প্রবেশ করে?
অপরিষ্কার খাবার, পানি, নখ কামড়ানো, এবং মাটি থেকে।
বাচ্চাদের কৃমি হলে কী করবো?
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়ান এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন।